তথ্য যুগ – ২০২৪

গোল্ড বা স্বর্ণ সবসময়ই খুব মূল্যবাদ একটা ধাতু। বিশেষ করে অলংকার তৈরিতে স্বর্ণ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। অনেকেই রয়েছে যারা বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বর্ণের দাম জানতে চায়। বিশেষ করে 22 ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত সে বিষয়ে জানার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কি এই 22 ক্যারেট স্বর্ণ আর কতই বা এর দাম? সে বিষয়েই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানাবো। তাহলে জেনে নিন 22 ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত today

স্বর্ণের ক্যারেট বলতে কি বুঝায়?

স্বর্ণের ক্যারেট বলতে স্বর্ণের বিশুদ্ধতা বা খাঁটি হওয়ার মাত্রা বোঝানো হয়। এটি একটি মানদণ্ড যা দ্বারা স্বর্ণের বিশুদ্ধতা পরিমাপ করা হয়। সাধারণত, স্বর্ণের বিশুদ্ধতাকে ২৪ ভাগে ভাগ করা হয়, এবং প্রতিটি ভাগকে একটি ক্যারেট হিসেবে ধরা হয়।

যদি কোনো স্বর্ণের গয়না ২৪ ক্যারেট হয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ খাঁটি স্বর্ণ বলে ধরা হয়, অর্থাৎ ১০০% বিশুদ্ধ। কিন্তু যদি কোনো স্বর্ণের গয়না ২২ ক্যারেট হয়, তাহলে এর মধ্যে ২২ ভাগ খাঁটি স্বর্ণ এবং বাকি ২ ভাগ অন্যান্য ধাতু থাকে, যা গয়নাকে আরও মজবুত করতে মেশানো হয়।

ক্যারেট সংখ্যা যত কম হয়, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা তত কম এবং অন্যান্য ধাতুর মিশ্রণ তত বেশি হয়। সাধারণত ২২ ক্যারেট, ১৮ ক্যারেট, ১৪ ক্যারেট ইত্যাদি ধাতু মিশ্রিত স্বর্ণের গয়নাগুলো বেশি প্রচলিত।

স্বর্ণের ক্যারেট কত ধরনের?

স্বর্ণের ক্যারেট সাধারণত কয়েকটি ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যা স্বর্ণের বিশুদ্ধতার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। এই পর্যায়ে এই জাতীয় ক্যারেটের ধরন গুলো সম্পর্কে জানাবো:

২৪ ক্যারেট (২৪K): বিশুদ্ধ স্বর্ণ যা ১০০% খাঁটি। এতে কোনো ধরনের অন্য ধাতু মেশানো থাকে না। এটি খুবই নরম এবং সহজেই বাঁকানো যায়। তাই সাধারণত গয়না তৈরিতে খুব একটা ব্যবহৃত হয় না।

২২ ক্যারেট (২২K): ২২ ভাগ খাঁটি স্বর্ণ এবং ২ ভাগ অন্যান্য ধাতু (যেমন: তামা, রূপা) মেশানো থাকে। এটি গয়না তৈরিতে বেশি ব্যবহৃত হয় কারণ এটি যথেষ্ট মজবুত এবং দেখতে উজ্জ্বল।

১৮ ক্যারেট (১৮K): ১৮ ভাগ খাঁটি স্বর্ণ এবং ৬ ভাগ অন্যান্য ধাতু মেশানো থাকে। এটি মজবুত এবং তুলনামূলকভাবে কম দামি, তাই গয়না এবং অন্যান্য অলঙ্কার তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।

১৪ ক্যারেট (১৪K): ১৪ ভাগ খাঁটি স্বর্ণ এবং ১০ ভাগ অন্যান্য ধাতু মেশানো থাকে। এটি আরও বেশি মজবুত এবং দীর্ঘস্থায়ী, কিন্তু স্বর্ণের উজ্জ্বলতা কিছুটা কম।

১০ ক্যারেট (১০K): ১০ ভাগ খাঁটি স্বর্ণ এবং ১৪ ভাগ অন্যান্য ধাতু মেশানো থাকে। এতে সবচেয়ে কম ক্যারেটের স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়। এটি দেখতে একটু কম উজ্জ্বল কিন্তু অত্যন্ত মজবুত।

প্রত্যেক ক্যারেটের স্বর্ণের দাম, রং, ও মজবুতির উপর ভিত্তি করে পার্থক্য করা হয়, এবং কত ক্যারেটের স্বর্ণ ব্যবহার করা হবে তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন এবং পছন্দের উপর।

22 ক্যারেট স্বর্ণ বলতে কি বুঝায়?

২২ ক্যারেট স্বর্ণ বলতে এমন স্বর্ণ বোঝানো হয়, যেখানে ২২ ভাগ খাঁটি স্বর্ণ এবং বাকি ২ ভাগ অন্যান্য ধাতু (যেমন তামা বা রূপা) মেশানো থাকে। স্বর্ণের বিশুদ্ধতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ২৪ ক্যারেটকে খাঁটি বা ১০০% বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে, ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মধ্যে খাঁটি স্বর্ণের পরিমাণ প্রায় ৯১.৬% (২২/২৪) হয়।

২২ ক্যারেট স্বর্ণের বৈশিষ্ট্য:

  • ২২ ক্যারেট স্বর্ণের রং উজ্জ্বল এবং খুবই আকর্ষণীয় হয়, তাই এটি গয়না তৈরির জন্য কার্যকর।
  • ২২ ক্যারেট স্বর্ণে কিছু পরিমাণে অন্যান্য ধাতু মেশানোর ফলে এটি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের তুলনায় বেশি মজবুত হয়, তাই এটি গয়না ও অলংকার তৈরির জন্য বেশ উপযোগী।
  • বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে গহনা তৈরিতে বেশ জনপ্রিয়।

22 ক্যারেট স্বর্ণের ব্যবহার

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক ঠিক কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় ২২ ক্যারেট স্বর্ণ। 

গয়না ও অলংকার তৈরিতে:

  • বিয়ের গয়না: ২২ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরির করা বিয়ের গয়না যেমন কানের দুল, চুড়ি, নেকলেস, আংটি, ইত্যাদি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
  • প্রতিদিনের গয়না: সাধারণ গয়না যেমন চেইন, ব্রেসলেট, আংটি ইত্যাদি তৈরিতেও ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়।
  • হাতের বালা ও চুড়ি: যেহেতু ২২ ক্যারেট স্বর্ণ মজবুত, তাই চুড়ি বা বালা তৈরিতে এটি বেশিরভাগ সময় ব্যবহৃত হয়।

প্রতীকী বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে:

  • ধর্মীয় মূর্তি: অনেক ধর্মীয় মূর্তি, যেমন দেব-দেবীর মূর্তি বা প্রতীক, ২২ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা হয়।
  • পূজার সামগ্রী: পূজার বিভিন্ন উপকরণ যেমন ধুপদানি, আরতি থালা ইত্যাদি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের হতে পারে।

উপহার সামগ্রীতে:

  • বিশেষ উপলক্ষে উপহার: জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, বা অন্যান্য বিশেষ দিনে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের গয়না উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
  • প্রতীকী স্বর্ণের বার: কিছু লোক ২২ ক্যারেট স্বর্ণের বার বা কয়েন উপহার হিসেবে দেয়, যা মূল্যবান এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

প্রদর্শনী ও সংগ্রহে:

  • স্বর্ণের সংগ্রহ: ২২ ক্যারেট স্বর্ণের গয়না, বার বা কয়েন সংগ্রহ করে অনেক মানুষ ভবিষ্যতের জন্য মূল্যবান সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করেন।
  • প্রদর্শনী: অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের অলংকার বা শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে রাখেন।

২২ ক্যারেট স্বর্ণের মজবুতি ও উজ্জ্বলতার কারণে এটি গয়না এবং অন্যান্য দামী জিনিসপত্র তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

স্বর্ণের দাম পরিবর্তন হওয়ার কারণ সমূহ 

স্বর্ণের দাম বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন গুলো মূলত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে ঘটে। স্বর্ণের দাম পরিবর্তনের প্রধান কারণ গুলো নিম্নরূপ:

১. আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব: স্বর্ণের দাম সাধারণত মার্কিন ডলারে নির্ধারিত হয়। যখন ডলারের মান বেশি হয়, তখন স্বর্ণের দাম কমে যায় এবং ডলারের মান কম হলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়। তাছাড়া স্বর্ণের আন্তর্জাতিক চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য স্বর্ণের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলে। চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বাড়ে এবং সরবরাহ কম হলে দাম বেড়ে যায়।

২. অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন: মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সময় স্বর্ণকে সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যার ফলে স্বর্ণের চাহিদা এবং দাম উভয়ই বৃদ্ধি পায়। আবার অর্থনৈতিক মন্দার সময়, বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে ঝোঁকে, যার ফলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়।

৩. জিওপলিটিকাল উত্তেজনা: যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণ কিনতে থাকে, যার ফলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়। আবার বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য সংঘাত বা সম্পর্কের অবনতি হলে স্বর্ণের চাহিদা বাড়তে পারে, যার ফলে দামও বৃদ্ধি পায়।

৪. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি:কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন তাদের স্বর্ণের মজুদ বৃদ্ধি করে, তখন স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে দাম বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে সুদের হার কমানোর ফলে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়ের পরিবর্তে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে, যার ফলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়।

৫. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিময় হার: দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পরে, যার ফলে দাম বেড়ে যায়। আবার যেসব দেশের মুদ্রার মান কমতে থাকে, সেসব দেশের জন্য স্বর্ণ কেনা ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে, যা দেশের অভ্যন্তরে স্বর্ণের দাম বাড়ায়।

৬. স্থানীয় বাজারের শুল্ক ও কর:দেশের সরকার স্বর্ণের আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করলে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায়। আবার স্থানীয় বাজারে স্বর্ণ কেনার উপর ভ্যাট বা অন্যান্য কর আরোপ করলে দাম বেড়ে যায়।

মূলত এই কারণগুলো একসঙ্গে বা পৃথকভাবে স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলে, যা স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণের দামকে পরিবর্তিত করে।

বাংলাদেশে বর্তমানে 22 ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত?

স্বর্ণ মূলত ভরি আঁকারে বিক্রি করা হয়। এক ভরিতে প্রায় ১১.৬৬৪ গ্রাম নির্ধারিন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে এই মাপকাঠি অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ, এক ভরি স্বর্ণ বা অন্য কোনো ধাতুর ওজন ১১.৬৬৪ গ্রাম হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম প্রতি গ্রামে প্রায় ৮,৯১৭ টাকা। এই দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে। প্রতি ভরির জন্য ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বর্তমানে প্রায় ১,২৭,৯৪২ টাকা, যা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্ণের দাম প্রতিদিনের বাজার পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে, তাই এটি বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে​। 

22 ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত today

বাংলাদেশে 22 ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত today (৩০ আগস্ট, ২০২৪ তারিখ) সেটির তালিকা প্রকাশ করা হলো:

22 ক্যারেট স্বর্ণের  ওজন ইউনিটদাম (টাকা)
প্রতি গ্রাম৮,৯০৬
প্রতি ভরি১,২৭,৯৪২
প্রতি কেজি৮,৯১০,৬০৪
প্রতি তোলা (Tola)১,০৩,৯৩১
প্রতি Ratti১,৬২১

বিঃদ্রঃ মনে রাখতে হবে যে, স্বর্ণের দাম প্রতিদিনই পরিবর্তণ হয়। 

তথ্যসূত্র: (Gold Price in United States per ounce

চুড়ান্ত মন্তব্য 

আমরা শুরু থেকেই দেখে আসছি যে স্বর্ণের দাম সব সময় উর্ধগতিতেই ছিলো। যেহেতু এটা এমন ধাতু সংরক্ষন করা সহজ ও লিমিটেড আঁকারে রয়েছে এর ফলে এর মূল্য সর্বদাই ছিলো, আছে এবং থাকবে যা এর দাম বৃদ্ধির পেছনেও আরেক বড় কারণ। তা যাইহোক, আশা করছি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে স্বর্ণ বা গোল্ড সম্পর্কে অনেক তথ্যের পাশাপাশি 22 ক্যারেট স্বর্ণের দাম কত Today (৩০ আগস্ট, ২০২৪) সেটাও জানতে পেরেছেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *